6
যীশু নিজের শহরে গেলেন 
(মথি 13:53-58; লূক 4:16-30) 
 1 পরে যীশু তাঁর শিষ্যদের নিয়ে সেখান থেকে নিজের শহরে চলে এলেন৷  2 এরপর তিনি বিশ্রামবারে সমাজ-গৃহে শিক্ষা দিতে লাগলেন; আর সমস্ত লোক তাঁর শিক্ষা শুনে আশ্চর্য্য হল৷ তারা বলল, “এ কোথা থেকে এ সমস্ত বিজ্ঞতা অর্জন করল? এ কি করে এমন বিজ্ঞতার সঙ্গে কথা বলে? কি করেই বা এইসব অলৌকিক কাজ করে?  3 এ তো সেই ছুতোর মিস্ত্রি এবং মরিয়মের ছেলে; যাকোব, য়োসি, যিহূদা ও শিমোনের ভাই; তাই নয় কি? আর এর বোনেরা কি আমাদের মধ্যে নেই?” এইসব চিন্তা তাদের মাথায় আসায় তারা তাঁকে গ্রহণ করতে পারল না৷ 
 4 তখন যীশু তাদের বললেন, “নিজের শহর ও নিজের আত্মীয় স্বজন এবং পরিজনদের মধ্যে ভাববাদী সম্মানিত হন না৷”  5 তিনি সেখানে কোন অলৌকিক কাজ করতে পারলেন না৷ শুধু কয়েকজন রোগীর ওপর হাত রেখে তাদের সুস্থ করলেন৷  6 তারা যে তাঁর ওপর বিশ্বাস করল না, এতে তিনি আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন৷ এর পরে তিনি চারদিকে গ্রামে গ্রামে ঘুরে শিক্ষা দিলেন৷ 
যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রচারে পাঠালেন 
(মথি 10:1, 5-15; লূক 9:1-6) 
 7 পরে তিনি সেই বারোজনকে ডেকে দুজন দুজন করে তাঁদের পাঠাতে শুরু করলেন এবং তাঁদের অশুচি আত্মার ওপরে ক্ষমতা দান করলেন৷  8 তিনি তাঁদের আদেশ দিলেন যেন তাঁরা পথে চলবার জন্য একটা লাঠি ছাড়া আর কিছু সঙ্গে না নেয় এবং রুটি, থলে এমনকি কোমরবন্ধনীতে কোন টাকাপয়সা নিতেও বারণ করলেন৷  9 তবে বললেন, পায়ে জুতো পরবে কিন্তু কোন বাড়তি জামা নেবে না৷  10 তিনি আরও বললেন, তোমরা যে কোন শহরে যে বাড়িতে ঢুকবে, সেই শহর না ছাড়া পর্যন্ত সেই বাড়িতে থেকো৷  11 যদি কোন শহরের লোক তোমাদের গ্রহণ না করে বা তোমাদের কথা না শোনে তবে সেখান থেকে চলে যাবার সময় তাদের উদ্দেশ্যে সাক্ষ্যের জন্য নিজের নিজের পায়ের ধূলো সেখানে ঝেড়ে ফেলো৷ 
 12 পরে তাঁরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়লেন, প্রচার করতে আরম্ভ করলেন এবং লোকদের মন-ফেরাতে বললেন৷  13 তাঁরা অনেক ভূত ছাড়ালেন ও অনেক লোককে তেল মাখিয়ে সুস্থ করলেন৷ 
হেরোদ ভাবলেন যীশুই যোহন 
(মথি 14:1-12; লূক 9:7-9) 
 14 যীশুর সুনাম চারদিকে এমন ছড়িয়ে পড়েছিল, যে রাজা হেরোদও* হেরোদ হেরোদ আন্তিপস৷ মহান হেরোদ পুত্র, গালীল এবং পেরির শাসনকর্তা৷ সে কথা শুনতে পেলেন৷ কিছু লোক বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহন বেঁচে উঠেছেন, আর সেইজন্যই তিনি এইসব অলৌকিক কাজ করছেন৷” 
 15 কিন্তু কেউ কেউ বলল, “তিনি এলীয়৷”† এলীয় যীশুর জন্মের 850 বছর পূর্বের এক ভাববাদী প্রচারক৷ যিনি মানুষের কাছে ঈশ্বরের প্রতিনিধি হিসাবে কথা বলেছিলেন৷ 
আবার কেউ কেউ বলল, “তিনি প্রাচীনকালের কোন ভাববাদীর মতোই একালের একজন ভাববাদী৷” 
 16 কিন্তু হেরোদ তাঁর কথা শুনে বললেন, “উনি সেই যোহন, যাঁর মাথা কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলাম, তিনিই আবার বেঁচে উঠেছেন৷” 
বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মৃত্যু 
 17 হেরোদ নিজের ভাই ফিলিপের স্ত্রী হেরোদিয়াকে বিয়ে করেছিলেন, সেই জন্য নিজের লোক পাঠিয়ে যোহনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে রেখেছিলেন৷  18 কারণ যোহন হেরোদকে বলেছিলেন, “ভাইয়ের স্ত্রীকে নিজের কাছে রাখা ঠিক নয়৷”  19 হেরোদিয়া রাগে যোহনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু পারে নি৷  20 কারণ হেরোদ যোহনকে ধার্মিক এবং পবিত্র লোক জেনে ভয় করতেন, সেইজন্যে তিনি তাঁকে রক্ষা করতেন৷ তাঁর কথা শুনে তিনি অত্যন্ত বিচলিত হতেন তবুও তাঁর কথা শুনতে ভালবাসতেন৷ 
 21 শেষ পর্যন্ত হেরোদিয়া যা চেয়েছিলেন সেই সুযোগ এসে গেল৷ হেরোদ তাঁর জন্মদিনে প্রাসাদের উচ্চপদস্থ কর্মচারী, সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ ও গালীলের গন্যমান্য নাগরিকদের জন্য নৈশভোজের আয়োজন করলেন;  22 আর হেরোদিয়ার মেয়ে এসে রাজা ও নিমন্ত্রিত অতিথিদের নাচ দেখিয়ে মুগ্ধ করল৷ 
রাজা সেই মেয়েকে বললেন, “আমাকে বল তুমি কি চাও? তুমি যা চাইবে তা-ই দেব৷”  23 তিনি শপথ করে আরো বললেন, “আমার কাছে যা চাইবে আমি তাই দেব, এমনকি অর্ধেক রাজ্যও দেব৷” 
 24 তাতে সে বেরিয়ে গিয়ে তার মাকে জিজ্ঞাসা করল, “আমি কি চাইব?” 
সে বলল, “বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথা৷” 
 25 মেয়েটি তাড়াতাড়ি রাজার কাছে ফিরে গেল এবং বলল, “আমার ইচ্ছা যে, আপনি বাপ্তিস্মদাতা যোহনের মাথাটি এনে এখনই থালায়় করে আমাকে দিন৷” 
 26 তাতে রাজা হেরোদ দুঃখ পেলেন: কিন্তু নিজের শপথের জন্য এবং ভোজসভার অতিথিদের জন্য তিনি মেয়েকে ফেরাতে চাইলেন না৷  27 তাই রাজা সঙ্গে সঙ্গে একজন সেনাকে যোহনের মাথা কেটে নিয়ে আসতে পাঠালেন৷ সে কারাগারে গিয়ে তাঁর শিরশ্ছেদ করল,  28 এবং থালায়় করে মাথাটি নিয়ে মেয়েটিকে দিল, মেয়েটি তা তার মাকে দিল৷  29 এই সংবাদ শুনে যোহনের শিষ্যরা এসে, তাঁর দেহটিকে নিয়ে গিয়ে কবর দিলেন৷ 
যীশু পাঁচ হাজারের বেশী লোককে খাওয়ালেন 
(মথি 14:13-21; লূক 9:10-17; যোহন 6:1-14) 
 30 এরপর যে প্রেরিতদের যীশু প্রচার করতে পাঠিয়েছিলেন, তাঁরা যীশুর কাছে ফিরে এসে যা কিছু করেছিলেন ও যা কিছু শিক্ষা দিয়েছিলেন সে সব কথা তাঁকে জানালেন৷  31 তখন তিনি তাঁদের বললেন, “তোমরা কোন নির্জন স্থানে গিয়ে একটু বিশ্রাম কর৷” কারণ এত লোক যাতায়াত করছিল যে তাঁদের খাবার সময় হচ্ছিল না৷ 
 32 তাই তাঁরা নৌকা করে কোন নির্জন স্থানে চললেন৷  33 কিন্তু লোকরা তাঁদের যেতে দেখল এবং অনেকে তাঁদের চিনতে পারল, তাই সমস্ত শহর থেকে লোকেরা বার হয়ে কিনারা ধরে দৌড়ে তাঁদের আগে সেখানে পৌঁছল৷  34 যীশু নৌকা থেকে বাইরে বেরিয়ে বহু লোককে দেখতে পেলেন, তাঁর প্রাণে তাদের জন্য খুবই দয়া হল; কারণ তাদের পালকহীন মেষপালের মতো দেখাচ্ছিল৷ তখন তিনি তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন৷ 
 35 সেই দিন বেলা প্রায় শেষ হয়ে এলে যীশুর শিষ্যরা এসে তাঁকে বললেন, “এটা নির্জন স্থান এবং সন্ধ্যাও ঘনিয়ে এল৷  36 এদের বিদায় করুন; যাতে এরা আশপাশের গ্রামে গিয়ে খাবার কিনতে পারে৷” 
 37 কিন্তু যীশু তাঁদের বললেন, “তোমরাই ওদের খেতে দাও৷” 
তাঁরা যীশুকে বললেন, “এতো লোককে রুটি কিনে খাওয়াতে গেলে তো দুশো দীনার লাগবে৷” 
 38 তিনি তাঁদের বললেন, “তোমাদের কাছে কখানা রুটি আছে খুঁজে দেখ৷” 
 39 তাঁরা দেখে বললেন, “আমাদের কাছে পাঁচখানা রুটি ও দুটো মাছ আছে৷” তখন তিনি প্রত্যেককে সবুজ ঘাসের উপর বসিয়ে দিতে বললেন৷  40 তাঁরা শ’ শ’ জন এবং পঞ্চাশ পঞ্চাশ জন করে সারি সারি বসে পড়ল৷ 
 41 তখন তিনি সেই পাঁচটা রুটি ও দুটো মাছ নিয়ে স্বর্গের দিকে তাকিয়ে ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুটিগুলোকে টুকরো টুকরো করে শিষ্যদের হাতে দিয়ে লোকদের দিতে বললেন৷ আর সেই দুটো মাছকেও টুকরো টুকরো করে সকলকে ভাগ করে দিলেন৷ 
 42 তারা সকলে তৃপ্তির সঙ্গে খেল৷  43 আর যা পড়ে রইল সেই সমস্ত টুকরো রুটি ও মাছে বারোটি টুকরি ভর্ত্তি হয়ে গেল৷  44 যত পুরুষ সেদিন খেয়েছিল, তারা সংখ্যায় পাঁচ হাজার ছিল৷ 
যীশু জলের উপর দিয়ে হাঁটলেন 
(মথি 14:22-33; যোহন 6:16-21) 
 45 পরে তিনি তাঁর শিষ্যদের নৌকায় উঠে তাঁর আগে ওপারে বৈৎসৈদাতে পৌঁছাতে বললেন, সেই সময় তিনি লোকেদের বিদায় দিচ্ছিলেন৷  46 লোকেদের বিদায় করে তিনি প্রার্থনা করবার জন্য পাহাড়ে চলে গেলেন৷ 
 47 সন্ধ্যাকালে নৌকাটি হ্রদের মাঝখানে ছিল এবং তিনি একা ডাঙ্গায় ছিলেন৷  48 তিনি দেখলেন যে শিষ্যরা বাতাসের বিরুদ্ধে খুব কষ্টের সঙ্গে দাঁড় টেনে চলেছেন৷ খুব ভোর বেলা প্রায় তিনটে ও ছটার মধ্যে তিনি হ্রদের জলের উপর দিয়ে হেঁটে তাদের কাছে এলেন৷ তিনি তাঁদের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলেন৷  49 কিন্তু হ্রদের উপর দিয়ে তাঁকে হাঁটতে দেখে তাঁরা ভাবলেন ভূত, আর এই ভেবে তাঁরা চেঁচিয়ে উঠলেন৷  50 কারণ তাঁরা সকলেই তাঁকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন; কিন্তু যীশু সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের বললেন, “সাহস করো! ভয় করো না, এতো আমি!”  51 পরে তিনি তাদের নৌকায় উঠলে ঝড় থেমে গেল৷ তাতে তাঁরা আশ্চর্য্য হয়ে গেলেন৷  52 কারণ এর আগে তাঁরা পাঁচটা রুটির ঘটনার অর্থ বুঝতে পারেন নি, তাঁদের মন কঠোর হয়ে পড়েছিল৷ 
যীশু বহুলোককে সুস্থ করলেন 
(মথি 14:34-36) 
 53 পরে তাঁরা হ্রদ পার হয়ে গিনেষরত্ প্রদেশে এসে নৌকা বাঁধলেন৷  54 তিনি নৌকা থেকে নামলে লোকরা তাঁকে চিনে ফেলল৷  55 তারা ঐ এলাকার সমস্ত অঞ্চলে চারদিকে দৌড়াদৌড়ি করে অসুস্থ লোকদের খাটিয়া করে তাঁর কাছে নিয়ে আসতে লাগল৷  56 গ্রামে, শহরে বা পাড়ায় যেখানে তিনি যেতেন, সেখানে লোকেরা অসুস্থ রোগীদের এনে বাজারের মধ্যে জড়ো করত৷ তারা মিনতি করত যেন শুধু যীশুর কাপড়ের ঝালর স্পর্শ করতে পারে৷ আর যারা তাঁর কাপড় স্পর্শ করত তারা সকলেই সুস্থ হয়ে যেত৷