5
ইস্রায়েল ঈশ্বরের বিশেষ বাগান 
 1 এখন আমি আমার ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে গান করব| দ্রাক্ষা ক্ষেতের (ইস্রায়েলের) প্রতি ঈশ্বরের যে ভালোবাসা আছে এই গান সে সম্পর্কেই| 
আমার ঈশ্বরের একটি দ্রাক্ষা ক্ষেত ছিল 
অতি উর্বর মাটিতে| 
 2 তিনি তার চারদিক খুঁড়ে মাঠটিকে ভালো ভাবে পরিষ্কার করলেন| 
তারপর সেখানে ভালো জাতের দ্রাক্ষা গাছ লাগালেন| 
তিনি মাঠের মাঝখানে দেখাশোনার জন্য 
একটি উঁচু বাড়ি তৈরি করলেন| 
সেখানে তিনি ভাল দ্রাক্ষা ফলবার আশায় বসে রইলেন| 
কিন্তু জন্মালো বুনো দ্রাক্ষা| 
 3 তাই ঈশ্বর বললেন, “যিহূদা ও জেরুশালেমের লোকরা, তোমরা আমার 
এবং আমার দ্রাক্ষাক্ষেতের কথা চিন্তা কর| 
 4 আমি আমার দ্রাক্ষা ক্ষেতের জন্য সাধ্যমত সবকিছুই করেছি| 
আমি তার জন্য আর কিই বা করতে পারতাম? 
আমি ভালো দ্রাক্ষার আশা করেছিলাম| 
কিন্তু শুধু বাজে দ্রাক্ষা ফলেছিল| 
কেন এমনটা ঘটল? 
 5 আমি আমার দ্রাক্ষা ক্ষেতের জন্য কি কি করব এখন আমি তোমাদের সে কথাই শোনাব| 
দ্রাক্ষা ক্ষেতের সুরক্ষার জন্য চারদিকে যে কাঁটার ঝোপগুলি আছে 
তা আমি তুলে ফেলে পুড়িয়ে দেব| 
আমি পাথরের প্রাচীর ভেঙে ফেলব 
এবং পাথরগুলি ক্ষেতের ওপর ফেলে দেওয়া হবে| 
 6 আমি আমার দ্রাক্ষা ক্ষেতকে খোলা মাঠে পরিণত করব| 
ঐ ক্ষেতের গাছগুলির কেউ যত্ন নেবে না| 
কেউ পরিচর্যা করবে না| 
সেখানে আগাছা আর কাঁটা জন্মাবে| 
আমি মেঘকে হুকুম দেব যাতে ক্ষেতে একফোঁটা বৃষ্টি বর্ষিত না হয়|” 
 7 ইস্রায়েল জাতি হল প্রভু সর্বশক্তিমানের এই দ্রাক্ষা ক্ষেত| আর যিহূদার লোকরা হল তাঁর এক কালের আদরের দ্রাক্ষার চারা| 
প্রভু আশা করেছিলেন ন্যায়, 
কিন্তু সেখানে ছিল শুধুই হত্যাকাণ্ড| প্রভু আশা করছিলেন সুন্দর জীবন, কিন্তু সেখানে শোনা যাচ্ছে অত্যাচারীদের এন্দন রোল| 
 8 তোমরা পাশাপাশি বাস করছ| ঘেঁসাঘেঁসি করে বাড়ি বানিয়েছ| তোমরা ক্ষেতের সঙ্গে ক্ষেতের সংযোগ এমন ভাবে করেছ যে আর এতটুকু জায়গা অবশিষ্ট নেই| কিন্তু প্রভু তোমাদের এমন শাস্তি দেবেন যে তোমাদের একাকী থাকতে হবে| সমস্ত ভূখণ্ডটিতে শুধু তোমরাই বাস করবে|  9 প্রভু সর্বশক্তিমান আমাকে এই কথাগুলি বললেন এবং আমি তাঁর কথা শুনলাম: “এখানে অনেক বাড়ি আছে, কিন্তু আমি অঙ্গীকার করছি যে, সমস্ত ঘর-বাড়ি ধ্বংস করা হবে| এখানে এখন অনেক সুন্দর মনোরম বাড়ি আছে| কিন্তু এই সব বাড়িগুলি খালি হয়ে যাবে|  10 সেই সময় দশ একর মাঠে যে দ্রাক্ষা হবে তা থেকে খুব সামান্য দ্রাক্ষারস তৈরি করা যাবে| বহু বস্তা বীজ থেকে খুবই অল্প শস্য উৎপন্ন হবে|” 
 11 তোমরা সকালে উঠেই পানীয় হিসাবে দ্রাক্ষারসের খোঁজ কর| তোমরা দ্রাক্ষারস পান করার জন্য গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাক|  12 তোমরা দ্রাক্ষারস, বাঁশি, ঢোলক এবং বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে ফূর্তি-আমোদ কর| কিন্তু তোমরা প্রভুর কর্মকাণ্ড দেখতে পাও না| প্রভু নিজ হাতে অনেক জিনিস তৈরি করেছেন| কিন্তু তোমরা ঐসব জিনিস দেখতে পাও না| 
 13 প্রভু বললেন, “আমার লোকদের বন্দী করে অন্যত্র নির্বাসনে দেওয়া হবে| কিন্তু কেন? কারণ তারা আমাকে প্রকৃতপক্ষে জানে না| ইস্রায়েলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছেন| তাঁরা তাঁদের অনায়াস জীবনযাপন নিয়ে সন্তুষ্ট| কিন্তু তারা খুবই তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুধার্ত হবে|  14 তারপর তারা মারা যাবে| এবং পাতাল মৃতদেহে ভরে যাবে| পাতালের সীমাহীন খিদে ও চাহিদা মেটাতে নামী, সাধারণ সব মানুষ মৃত্যুমুখে পতিত হবে এবং এই সব মানুষ কবরে যাবে|” 
 15 ঐসব লোকদের অবদমিত করা হবে| প্রত্যেককে বিনম্র করা হবে এবং তাদের গর্ব কমিযে আনা হবে|  16 প্রভু সর্বশক্তিমান, ন্যায়বিচার করবেন এবং লোকরা জানবে যে তিনি মহান| পবিত্রতম ঈশ্বর যেগুলি সঠিক ও ন্যায্য সেই সব কাজই করবেন এবং লোকরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাবে|  17 ঈশ্বর ইস্রায়েলের অধিবাসীদের দেশছাড়া করবেন| দেশ খালি হয়ে যাবে| মেষরা ইচ্ছামতো যেখানে খুশী ঘুরে বেড়াতে পারবে| একদা ধনী লোকের মালিকানাধীন জমি-জায়গাতে মেষ চরে বেড়াবে| 
 18 ঐ লোকগুলিকে দেখ! অপ্রয়োজনীয় দড়ি নিয়ে লোকরা যেমন ওযাগন টানে তেমনি এই ধরণের লোকরা নিজেদের পাপ, কুকর্ম এবং দোষকে পেছনে টেনে নিয়ে বেড়ায়|  19 এই লোকরা বলে, “আমাদের কামনা, ঈশ্বর যা যা করার পরিকল্পনা করেছেন তা তাড়াতাড়ি করবেন| তারপর আমরা জানব কি ঘটবে| আমাদের আশা প্রভুর পরিকল্পনা খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হবে| তারপরই আমরা জানতে পারব তাঁর পরিকল্পনা কি|” 
 20 এই ধরণের লোকরা ভালো জিনিসকে খারাপ বলে আর খারাপ জিনিসকে ভালো বলে মনে করে| এরা আলোকে অন্ধকার আর অন্ধকারকে আলো বলে মনে করে| এরা টককে মিষ্টি এবং মিষ্টিকে টক ভাবে|  21 ঐসব লোকরা নিজেদের খুব জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান মনে করে|  22 এই ধরণের লোকরা দ্রাক্ষারস পান করার জন্য বিখ্যাত| এরা দ্রাক্ষারসের মিশ্রণ তৈরীতে একেবারে সিদ্ধহস্ত|  23 তারা ঘুষ নিয়ে অপরাধীদের নিরাপরাধ বলে ঘোষনা করে| কিন্তু তারা ভালো লোককে ন্যায্য বিচার পেতে দেবে না|  24 এই সব লোকের কপালে খুবই দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে| খড়কুটো এবং গাছের পাতাকে আগুন যেমন অনায়াসে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় তেমনি এদের উত্তরপুরুষদেরও পুরোপুরি ধ্বংস করা হবে| মৃত শিকড় যেমন গুঁড়োতে পরিণত হয়, আগুন যেমন ফুলকে পুড়িয়ে তার ছাই বাতাসে উড়িয়ে দেয়, এদের উত্তরপুরুষরা সে ভাবেই ধ্বংস হবে| 
ঐসব লোকরা প্রভু সর্বশক্তিমানের শিক্ষামালা মেনে চলেনি| তারা ইস্রায়েলের পবিত্রজনটির (ঈশ্বর) বার্তা ঘৃণা করত|  25 তাই প্রভু তাঁর লোকদের ওপর খুব রুদ্ধ হয়েছেন| প্রভু তাঁর হাত উৎতোলন করবেন এবং তাদের এমন কঠিন ভাবে শাস্তি দেবেন যে পর্বত পর্যন্ত ভয়ে কাঁপবে| তাদের মৃতদেহগুলি জঞ্জালের মতো রাস্তায় পড়ে থাকবে| কিন্তু তবুও ঈশ্বরের রোধ পড়বে না| তাঁর হাত তাদের শাস্তি দেবার জন্য উৎতোলিত থেকে যাবে| 
ইস্রায়েলকে শাস্তি দিতে ঈশ্বর সৈন্য আনবেন 
 26 দেখ! ঈশ্বর দূরবর্তী জাতিগণের প্রতি সঙ্কেত দিচ্ছেন| তিনি তাদের ডাকার জন্য পতাকা তুলছেন এবং শিস দিচ্ছেন| দেখ, শত্রুরা দূরদেশ থেকে আসছে| তারা অচিরে দেশে ঢুকে পড়বে| তারা খুব দ্রুত আসছে|  27 এই শত্রুরা কখনও ক্লান্ত হবে না, হোঁচট খাবে না এবং ঘুমিয়ে পড়বে না| তাদের অস্ত্রের কটিবন্ধন খুলে যাবে না| তাদের জুতোর ফিতে কখনই ছিঁড়ে যাবে না|  28 এই শত্রুদের তীর ধারালো হবে| তাদের সব ধনুকগুলি তীর ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত থাকবে| তাদের ঘোড়ার পায়ের পাতা হবে চক্মকি পাথরের মতো শক্ত| তাদের রথের চাকায় ধূলিঝড় উঠবে| 
 29 শত্রুরা সিংহের গর্জনের মতো চিৎকার করবে| তারা সিংহ শাবকের মতো গর্জন করবে| শত্রুরা সরোধ গর্জন করবে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরতদের ধরে ফেলবে| লোকরা লড়াই করে মুক্তি পেতে চেষ্টা করবে| কিন্তু তাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না|  30 তাই “সিংহ” গর্জন হবে সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জনের মতো| এবং বন্দী অবরুদ্ধ লোকরা মাটির দিকে তাকাবে| কিন্তু দেখবে শুধুই অন্ধকার| ঘন মেঘে সমস্ত আলো অন্ধকারে ঢেকে যাবে|